ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজন চ্যাম্পিয়নস লিগ। জাতীয় দলের খেলায় যেমন বিশ্বকাপ, ক্লাবের ক্ষেত্রে ঠিক তেমন চ্যাম্পিয়নস লিগ। তবে পার্থক্য হলো বিশ্বকাপ প্রতি চার বছরে একবার হয় অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন লিগ প্রতি বছরই উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়। এখানে বলে রাখা দরকার, চ্যাম্পিয়নস লিগ বলতে অতি অবশ্যই ইউরোপিয়ন চ্যাম্পিয়নস লিগকে বোঝানো হচ্ছে। যারা ক্লাবের খেলা ফলো করে থাকেন, তারা ভালো করে জানেন ক্ষেত্র বিশেষে এই কম্পিটিশনটিকে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের চেয়ে প্রতিযোগীতাপূর্ণ ভাবা হয়।
তারকা, মহাতারকার ভিড়ে এত জম্পেস্ট একটা প্রতিযোগীতা যা প্রতি বছরের ব্যালন ডি অর বা ফিফা দ্য বেস্ট জেতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবটা রাখে। সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ক্লাব প্রতিযোগীতা এত এত তারকা, মহাতারকা পদ চারণায় মূখর যে কোটি কোটি ফুটবল ভক্তের রাতের ঘুম হারাম করতে এককথায় সিদ্ধ হস্ত। পিক টাইমের মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ বোঝাতে শুধু যারা লা-লিগার রিয়েল-বার্সার দ্বৈরথ ভাবেন তাদের জন্য বলে রাখি, আপনি ভুল ভাবছেন, আপনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগকেও মাথায় রাখতে হবে। ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেসি ৪টা আর রোনোলদো ৫টা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছে। যেটি এই দুই মহাতারকার ব্যক্তি অর্জনের পাল্লা আরো বেশি ভারী করেছে। দুই জনেই গোলের সেঞ্চুরি করেছেন প্রতিযোগীতাটিতে। তারাই প্রতিযোগীতাটির দুই টপ গোল স্কোরার।
যারা রোমান্স পছন্দ করেন তাদের জন্য বলে রাখি, আপনি ২০০৯ সালের রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোসে হওয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে বার্সালোনার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে পারেন। মেসির হেডে ডাবল লিড পায় পেপ গার্দিওলার সর্বজয়ী বার্সা। মেসির হেডও যে এত মোহনীয় হতে পারে তা না দেখলে আপনাকে বোঝানো কঠিন। আবার জুভেন্টাসের সাথে রোলান্দোর বাইসাইকেল কিকের গোলটি আপনাকে মোহিত না করলে আপনার ফুটবল প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক কিছু হবে না।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (ইউরোপীয় কাপ অথবা সংক্ষেপে ইউসিএল নামে পরিচিত) হচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ন ফুটবল অ্যাসোসিয়শন (উয়েফা) কর্তৃক আয়োজিত একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা। যা ১৯৫৫ সাল থেকে চলে আসতেছে। তবে ১৯৯২ সালে এই প্রতিযোগিতার নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে, একই সাথে এই প্রতিযোগিতাটি একটি রাউন্ড-রবিন গ্রুপ পর্বে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লাব অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে।
এই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৬৮ টি আসরের মধ্যে প্রতিযোগিতাটি মোট ২২টি ক্লাব জয়লাভ করেতে পেরেছে, যার মধ্যে থেকে ১৩টি ক্লাব একাধিকবার জয়লাভ করেতে সক্ষম হয়েছে।
তবে প্রতিযোগীতাটিতে সবচেয়ে সফল স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। যারা প্রথম পাঁচ মৌসুমে টানা ৫টি শিরোপাসহ সর্বমোট ১৪টি শিরোপা জয়লাভ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালীয় ক্লাব এসি মিলান, যারা এপর্যন্ত ৭ বার জিতেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি যারা ২০২৩ সালে ইস্তাম্বুলের আর্তাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে ১–০ গোলে হারিয়ে ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়। শেষ অব্দি ট্রেবল জেতে। একটি ক্লাবের পক্ষে যা অসাধারণ এক অর্জন।
ফুটবলকে যারা ভালোবাসেন, যারা প্রতিনিয়ত ফুটবলে রোমান্স খোঁজেন, যারা মেসি-রোলানদোর পরবর্তীতে হল্যান্ড, এমবাপ্পে অথবা রিয়াল তারকা জুডে বেলিং হামের শ্রেষ্টত্ব বিচার করে সুখ অনুভব করতে প্রস্ততি নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে- চ্যাম্পিয়নস লিগের ৬৯ তম আসরের দ্বিতীয় রাউন্ড দেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। আর দেখে নিন রাউন্ড অব ১৬ -এর কে কার প্রতিপক্ষ-
আর্সেনাল – পোর্তো , বার্সালোনা – নাপোলি, রিয়েল সোসিয়েদাদ – পিএসজি, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ – ইন্টার মিলান, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড – পিএসভি, বয়ার্ন মিউনিখ – লাজিও, ম্যানচেস্টার সিটি – কোপেন হেগেন, রিয়াল মাদ্রিদ – আরবি লাইপজিগ।